Skip to main content
Author

‘হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়;
বসন্তে বরিয়া তুমি ল'বে নাকি তব বন্দনায়?'
কহিল সে সি্নগ্ধ আঁখি তুলি :
‘দখিন দুয়ার গেছে খুলি?'
বাতাবী নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?

‘এখনও দেখনি তুমি?' কহিলাম :'কেন কবি আজ
এমন উন্মন তুমি? কোথা তব নব পুষ্প সাজ?'
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া :
‘অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কিবেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই রাখিনি সন্ধান।'

কহিলাম :'ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি এ মোর মিনতি।'
কহিল সে মৃদু মধুস্বরে :
‘নাই হ'ল-না হোক এবারে
আমারে গাহিতে গান, বসন্তের আনিতে বরিয়া
রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তো ফাগুনে স্মরিয়া।'

কহিলাম : ‘ওগো কবি! অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তমি তারে করিলে বৃথাই।'
কহিল সে পরম হেলায় :
‘বৃথা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফুটেনি শাখে? পুষ্পারতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই অর্ঘ্য বিরচন?'

‘হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?'
কহিলাম :'উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা'
কহিল সে কাছে সরে আস :
‘কুহেলী উত্তরীতলে মাঘের সন্ন্যাসী
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনমতে।'

['সাঁজের মায়া' কাব্যগ্রন্থ থেকে]

Rate this poem
No votes yet
Reviews
No reviews yet.