Skip to main content

এক-একটা মুখ যেন বালির ভেতরে পোঁতা আধেক নৌকার মতো
অবয়ব নাক মুখ স্পষ্ট নয়, ঠিকানা হারিয়ে গেছে, বাড়িঘর বিষয়-আশয়—
ছিল নাকি কেউ মায়ের আঁচলে ধন, পিতার আশার স্বপ্নঘেরা ছেলে,
কোনো তরুণীর গোপন চাহনি পড়েছিল কারও মুগ্ধ নওল দু'চোখে কিনা,
আজ আর জানবার কোনোই উপায় নেই।
নামটুকু কেবলি উদ্ধার করি
নথিপত্র ঘেঁটে; চল্লিশ বছর বৈ তো নয়, ইতোমধ্যে অপরিচিতির মেঘ
ঢেকেছে তাদের মুখ, যেন তারা অবয়বহীন শহীদ নামের ইতিবৃত্ত,
যেন কোনো ভিন্গ্রহ থেকে আসা এলিয়েন,
আস্হাবে কাহাফ, কিংবা কোনো
সপ্তম শতকী ডুবে-যাওয়া নাবিকের চিরকুটে লেখা
কাহিনি—বোতলে-পোরা—আমাদের হাতে এসে পড়েছে দৈবাত্,
যেন তারা আমাদের কেউ নয়, কক্ষনো ছিল না।

একাত্তর আজ গল্প বটে, সযত্নে পাঠ্য লাল মার্জিনের খাতা
গল্প, বীরত্ব আর কপটতা, রক্ত আর মৃত্যুর অবাক কাহিনি মাত্র।
কিন্তু এরাও জীবিত ছিল একদিন, ছিল আমাদের সহপাঠী, আজও যারা
বেঁচে আছি, চিনতাম তাদের কাউকে কাউকে :
জিল্লুর মুর্শিদ, ইতিহাসের পড়ুয়া, ফরিদপুরের ছেলে, কিংবা আতাউর,
ময়মনসিংহ শহর থেকে পড়তে আসা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র,
কিংবা সাদত স্যার, মহান শিক্ষক, যিনি
এপ্রিলের কবলিত মধ্যদিনে বাসা থেকে সেই যে গেলেন নিউমার্কেটের দিকে,
আর ফিরলেন না কোনো দিন। বদিউল, আবদুর রহিম, আমিরুস সালাম
শামসুজ্জামান এবং মনির, তারা আজ গল্পে নেই,
নেই কোনো মার্জিনে কোথাও,
শুধু স্মৃতি কান্নার আখরে আঁকিবুঁকি এঁকে রেখে গেছে হয়তো মায়ের,
বোনের, প্রিয়ার মধ্যরাতের বালিশে, হয়তো তারাও গত এত দিনে;
ইতোমধ্যে শহীদের মুখগুলো বিস্মৃতির বাওড়ে উধাও—
কবরের বাতিল ঘাসের মধ্যে ডুবে-থাকা হাল-ভাঙা নাবিকের নাও।

Rate this poem
No votes yet
Reviews
No reviews yet.